বান্দরবানশনিবার, ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সংক্রমণ কমলেও করোনায় বাড়লো মৃত্যু

প্রতিবেদক
বার্তা বিভাগ
জুলাই ১৮, ২০২১ ১০:২২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপই যেন কাজে আসছে না। এক দিনের ব্যবধানে দৈনিক মৃত্যু ফের দুইশ ছাড়িয়ে গেল। গত চব্বিশ ঘণ্টায় মারা গেছেন করোনা আক্রান্ত আরও ২০৪ জন। টানা পাঁচ দিন দুইশর বেশি মৃত্যুর পর গত শুক্রবার এ সংখ্যা ছিল ১৮৭। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২৬ জন মারা যান। গত রোববার এক দিনে সর্বোচ্চ ২৩০ জনের মৃত্যু হয়। এর পর থেকে দুইশর নিচে নামেনি দৈনিক মৃত্যু।

পরদিন সোমবার ২২০ জন, মঙ্গলবার ২০৩ ও বুধবার ২১০ জন প্রাণ হারান। দেশে এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৭ হাজার ৬৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দেশে টানা পাঁচ দিন দৈনিক করোনা শনাক্ত ১২ হাজারের বেশি হওয়ার পর গত চব্বিশ ঘণ্টায় শনাক্ত সংখ্যা নেমে এসেছে ৯ হাজারের নিচে। এ সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে আট হাজার ৪৮৯ জনের। মূলত নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্তের সংখ্যায় এ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। আগের দিনের চেয়ে গত চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা প্রায় ১৩ হাজার কম ছিল। রোগীর সংখ্যাও কমেছে প্রায় চার হাজার।

শুক্রবার ১২ হাজার ১৪৮ ও বৃহস্পতিবার ১২ হাজার ২৩৬ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। এর আগে গত সোমবার ১৩ হাজার ৭৬৮ জন শনাক্ত হয়। এটিই এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের ঘটনা। পরদিন মঙ্গলবার ১২ হাজার ১৯৮ ও বুধবার ১২ হাজার ৩৮৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। সব মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১০ লাখ ৯২ হাজার ৪১১ জনে পৌঁছাল।

এদিকে, নমুনা পরীক্ষা কম হলেও আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে শনাক্তের হার। গত চব্বিশ ঘণ্টায় প্রতি একশজনের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ২৯ দশমিক শূন্য ৬ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার শনাক্তের হার ছিল ২৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে দেশে এখন মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। সেইসঙ্গে আগের দিনের চেয়ে সুস্থ রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত আট হাজার ৮২০ রোগী আক্রান্ত থেকে সুস্থতার তালিকায় এসেছেন। এর আগের দিন শুক্রবার আট হাজার ৫৩৬ রোগী সুস্থ হয়েছিলেন। এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত মোট ৯ লাখ ২৩ হাজার ১৬৩ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।

গত চব্বিশ ঘণ্টায় ২৯ হাজার ২১৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৪৫টি। শুক্রবার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার ৯৪৭টি। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭২ লাখ ১৫ হাজার ৫৮১টি। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত এক সপ্তাহের তথ্য থেকে দেখা যায়, মহামারির ২৭তম সপ্তাহের তুলনায় গত সপ্তাহে শনাক্ত রোগী বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং মৃত্যু বেড়েছে ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বড় লাফ দেখা গেছে আক্রান্ত থেকে সুস্থতার তালিকায়। আগের সপ্তাহের তুলনায় ২৮তম সপ্তাহে সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ। সেইসঙ্গে নমুনা পরীক্ষাও বেড়েছে ১৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

১০ দিনে প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার শনাক্ত, দুই হাজার ৭৬ মৃত্যু :স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, সরকারি হিসাবে সর্বশেষ ১০ দিনে নতুন করে এক লাখ ১৪ হাজার ৮৪৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে প্রতিদিন গড়ে রোগী পাওয়া গেছে ১১ হাজার ৪৮৪ জন। করোনার সংক্রমণে গত ১০ দিনে প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার ৭৬ জন, অর্থাৎ এই সময়ে প্রতিদিন গড়ে ২০৮ জন রোগী মারা গেছেন।

গত ১০ দিনে সংক্রমণ হার ছিল- ৮ জুলাই ৩১ দশমিক ৬২ শতাংশ, ৯ জুলাই ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ১০ জুলাই ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ১১ জুলাই ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ১২ জুলাই ৩১ দশমিক ২৪ শতাংশ, ১৩ জুলাই ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ১৪ জুলাই ২৯ দশমিক ১৪ শতাংশ, ১৫ জুলাই ২৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, ১৬ জুলাই ২৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। সর্বশেষ চব্বিশ ঘণ্টায় ২৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ হারে রোগী পাওয়া গেছে।

শনাক্তের ৫৩ শতাংশই ঢাকার, সর্বোচ্চ হার বরিশালে :স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় ঢাকা মহানগরে পাওয়া গেছে দেশের মোট শনাক্তের ৩৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ রোগী। এ সময়ে মহানগরে তিন হাজার ২৭১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। দেশের মোট পরীক্ষার ৪০ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছে এই মহানগরে। অন্য দিনগুলোর মতোই বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে চার হাজার ৪৮০ জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত চব্বিশ ঘণ্টায় সারাদেশে শনাক্ত করোনা রোগীর ৫২ দশমিক ৭৭ শতাংশই মিলেছে শুধু ঢাকা বিভাগে। অবশ্য গত চব্বিশ ঘণ্টায় মোট পরীক্ষার ৫২ দশমিক ০৪ শতাংশ পরীক্ষাই হয়েছে ঢাকায়। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে এক হাজার ৮৮৫, রাজশাহীতে ৫৮৯, খুলনায় ৫৩৯, সিলেটে ৩৪১, রংপুরে ৩৩০, ময়মনসিংহে ১৬৯ এবং বরিশালে ১৫৬ জনের করোনা ধরা পড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো গতকালের বিজ্ঞপ্তি বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, দেশের বিভাগগুলোর মধ্যে গত চব্বিশ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তের হার বরিশাল বিভাগে। এই বিভাগে নমুনা পরীক্ষা করে ৪৮ দশমিক ৬০ শতাংশ হারে রোগী পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সিলেট বিভাগে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী পাওয়া গেছে ৩৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩২ দশমিক ০৫ শতাংশ, রংপুরে ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ, খুলনায় ২৭ দশমিক ৯৭, ময়মনসিংহে ২৩ দশমিক ৩৭ এবং রাজশাহীতে সর্বনিম্ন ১৯ দশমিক ১০ শতাংশ হারে রোগী পাওয়া গেছে। বিভাগওয়ারি তালিকায় শনাক্তের মতো মৃত্যুতেও শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। গত চব্বিশ ঘণ্টায় এই বিভাগে ৮২ জন করোনা সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খুলনা বিভাগে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে করোনায় চট্টগ্রামে ৩২, রাজশাহীতে ২০, রংপুরে ১০, বরিশালে পাঁচ, ময়মনসিংহে চার এবং সিলেটে দু’জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বয়সভিত্তিক মৃত্যুর হিসাবে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ১০২ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫৮ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ২৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে পাঁচজন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে রয়েছেন দু’জন। মৃতদের মধ্যে ১২৫ জন পুরুষ এবং ৭৯ জন নারী। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬২ শতাংশ। সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৫১ শতাংশ।

সূত্রঃ প্রথম আলো।