দেশে গত ছয় বছরের তুলনায় এবার ঈদুল আজহায় সড়ক–মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে, মৃত্যুও হয়েছে বেশি। এবার মোট ২৪০টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৭৩ জন। এর মধ্যে কেবল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৯৩ জন।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শুক্রবার, ৩০ জুলাই, ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সমিতি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার ঈদুল আজহার যাত্রা ছিল ১৪ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিন। দুর্ঘটনার শীর্ষে ছিল মোটরসাইকেল। এই সময়ের মধ্যে ৮৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় ৯৩ জন নিহত ও ৫৯ জন আহত হয়। এই সংখ্যা মোট নিহতের প্রায় ৩৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ এবং আহত ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।
এবার অতিমাত্রায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পরিবহনের সংকট ও ভাড়া বেশির কারণে এবার মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের দিকে ঝুঁকেছে বেশি। কিন্তু তাদের মহাসড়কে গাড়ি চালানোর তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না। আবার ছোট বাহন মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে থাকে বেশি। এর বাইরে সড়কে সংশ্লিষ্টদের নজরদারিও ছিল কম। এ কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিধিনিষেধে স্বল্প সময়ের জন্য গণপরিবহন চলায় মহাসড়কে প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ঈদে যাতায়াতকারী ব্যক্তিগত যান বিশেষ করে মোটরসাইকেলচালকদের রাতে সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য, উল্টো পথে যানবাহন চলাচল, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঈদুল আজহায় মোট ১ হাজার ২৮৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জন। আহত হয়েছে ৪ হাজার ৩৫৬ জন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষক ও সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অতীতে ঈদুল আজহায় দেখেছি, ঈদের আগে ২০ শতাংশ মানুষ ঢাকা ছাড়ে। কিন্তু এবার ঈদ ও বিধিনিষেধের কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। স্বাভাবিক ঈদের সময় গড়ে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ত। এবার গড়ে প্রায় প্রতিদিন ১৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। কিন্তু সড়কের এই চাপ নেওয়ার সক্ষমতা নেই। এ ছাড়া এবার মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করেছে বেশি, যা দুর্ঘটনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সূত্রঃ আজকের পত্রিকা।