বাংলাদেশ–অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টি–টোয়েন্টি ম্যাচটা ছিল আসলে দুই দলের বোলারদের লড়াই। একদিকে অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের গতি, অন্যদিকে বাংলাদেশের স্পিনারদের ঘূর্ণি–জাদু। রোমাঞ্চকর এ লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিতেছে বাংলাদেশের স্পিনাররাই। আর সেই জয়ে সবার সামনে থাকলেন তরুণ বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ।
শুরুটা করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই পেসার মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজেলউড। দুজনের বিপক্ষে খাবি খেয়েছেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। জবাবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের আটকাতে শুরুতেই আক্রমণে আসেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। নাসুম–সাকিব–মেহেদীদের ঘূর্ণি বিষে ১১ রান তুলতেই সফরকারীরা হারায় ৩ উইকেট। পরেও এ ঘূর্ণির কোনো জবাব ছিল না অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের কাছে।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে কোনো সুযোগই দেননি বাংলাদেশের স্পিনাররা। আর শেষ দিকে এসে লেজ মুড়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। বোলারদের দাপটেই ১৩১ রানের পুঁজি নিয়েও দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ১৮ ওভারে ১০১ রানে অস্ট্রেলিয়ার যে ৭ উইকেট পড়েছে, ছয়টিই নিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। এর ৪টি আবার নাসুমের (১৯ রানে)।
ম্যাচ শেষে নাসুম জানিয়েছেন তাঁর সাফল্যের রহস্য, ‘আমার লক্ষ্যে ছিল, রান আটকানোর চেষ্টা করা। ডট বল করা। সেটি করতে গিয়ে উইকেট পেয়ে গেছি।’ ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে বাঁহাতি স্পিনার কৃতিত্ব দিলেন মাহমুদউল্লাহ ও সাকিবকে, ‘রিয়াদ ভাই আর সাকিব ভাই দুজন মিলে আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। যখনই আমি বোলিং করতে যাচ্ছিলাম, তখন তাঁরা এসে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী বোলিং করে সফল হয়েছি।’
টস হেরে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের জন্য শুরুটা ছিল বেশ হতাশার। জিম্বাবুয়ে সফরে ভালো করার রেশটা না কাটতেই নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি ওপেনার সৌম্য সরকার। নিজেদের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুই ফিফটির সঙ্গে বোলিংয়ে ভালো অবদান রেখে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো সিরিজসেরার পুরস্কার পাওয়া সৌম্য গতকাল মিরপুরে বুঝলেন অস্ট্রেলিয়া আর জিম্বাবুয়ের পার্থক্য কতটা! হ্যাজেলউডের করা লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে সৌম্য (২) বল টেনে আনেন স্টাম্পে।
শুধু সৌম্যই নন, স্টার্ক-হ্যাজেলউড-অ্যান্ড্রু টাইদের সামনে নড়বড়ে ছিলেন বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানই। লিটন দাস-তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে সৌম্যর সঙ্গে ওপেন করছেন মোহাম্মদ নাঈম। জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং উইকেটেও পাওয়ার প্লেতে রান তুলতে সংগ্রাম করেছেন। কাল পাওয়ার প্লেতে স্টার্ককে দুই ছক্কা মারলেও তাঁর ১০৩.৪৪ স্ট্রাইক রেট বলে দিচ্ছে খুব বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন না এ ম্যাচেও। হ্যাজেলউডের ফাঁদে পা দিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও (২০)। সেই চাপে থেকেই বাংলাদেশ থেমে যায় ১৩১ রানে।
আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ যে ৭ উইকেট হারিয়েছে, ছয়টিই নিয়েছেন তিন অস্ট্রেলিয়ান পেসার। পেসারদের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা নতুন নয়। কাল সেটি আরেকবার দেখা গেল। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিতলেও আড়াল হচ্ছে না গতির বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এই দুর্বলতা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩১/৭ (সাকিব ৩৬, নাঈম ৩০, আফিফ ২৩; হ্যাজলউড ৩/২৪, স্টার্ক ২/৩৩,
টাই ১/২২)
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১০৮ (মার্শ ৪৫, ওয়েড ১৩, ফিলিপে ৯; নাসুম ৪/১৯, মোস্তাফিজ ২/১৬)
ফল: বাংলাদেশ ২৩ রানে জয়ী