পরপর দু’দিনে অস্ট্রেলিয়াকে দুইবার হারিয়ে সিরিজ জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। সেই সম্ভাবনা শেষ পর্যন্ত পূর্ণ হল ৪ দিনে ৩ জয়ে সিরিজ নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে। ৫ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ৩টি জিতে গতকাল মিরপুরে নতুন এক ইতিহাস লিখেছে বাংলাদেশ। এখন শুধু অপেক্ষা বাংলাওয়াশের!
দেশের মাটিতে এই সিরিজ জয় আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। কারণ, দলটার নাম অস্ট্রেলিয়া। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজের আগে একটি টি-টোয়েন্টিও জিততে না পারা বাংলাদেশ এবার সিরিজই জিতে নিল, সেটিও দুই ম্যাচ বাকি থাকতে।
এই সিরিজ জয়ের স্বপ্ন বোনা শুরু হয়েছিল প্রথম ম্যাচ জয়ের পর থেকে। মিরপুরে নিচু-মন্থর উইকেটে সাকিব আল হাসান, নাসুম আহমেদ আর মেহেদী হাসানের স্পিন বিষে নীল হয়েছিলেন আলেক্স ক্যারি-মিচেল মার্শরা। বাংলাদেশের দেওয়া ১৩১ রানই পাহাড়সম টার্গেট হয়ে যায় নাসুম-সাকিবদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে। ১০৮ রানেই অস্ট্রেলিয়ানরা গুটিয়ে গেলে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে যায় ২৩ রানে।
প্রথম ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ যেখান থেকে শেষ করেছিল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শুরুটা যেন সেখান থেকেই করে। তবে এবার একটু ভিন্ন পরিকল্পনায়। আগের ম্যাচে স্পিনে কাবু অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের এবার পেস আক্রমণে ঘায়েল করার ছক কষে নেমেছিল মাহমুদউল্লাহর দল। আর এখানেই প্রশ্ন কমন পড়েনি মার্শ-ওয়েডদের। মোস্তাফিজ–শরিফুলের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে এবার অস্ট্রেলিয়াকে বেঁধে ফেলে ১২১ রানে। বাকি কাজটা সারেন তরুণ আফিফ হোসেন-নুরুল হাসান সোহানরা।
২৪ ঘন্টায় প্রথম দুই টি-টোয়েন্টি জিতে অস্ট্রেলিয়াকে হয়তো সিরিজ জয়ের বার্তায় দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে গতকাল ম্যাচ শুরুর আগে থেকেই বৃষ্টির বাগরা। ইতিহাস গড়ার আগে খানিক নাটকীয়তা। ক্ষণে ক্ষণে রং বদলানো মিরপুরের সবুজ গালিচায় ম্যাচ গড়াবে কি না সেটি নিয়েও ছিল সংশয়। সব মিলিয়ে দারুণ এক রোমাঞ্চকর আবহে প্রস্তুত ছিল ইতিহাস গড়ার মঞ্চ।
তবে ১০০ রানের আগেই বাংলাদেশের ৬ ব্যাটসম্যান ফিরে গেলে সিরিজ জয়ের আশা ক্ষীণ হয়ে আসে। ব্যাটসম্যানদের যাওয়া-আসার মিছিলে উইকেটে দাঁড়িয়ে যান অধিনায়ক নিজেই। শেষ ওভারে মাহমুদউল্লাহ যখন ৫২ রানে আউট হলেন ততক্ষণে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়াকে ১২৮ রানের লক্ষ্য দিয়ে বোলিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা দেন প্রথম ম্যাচের জয়ের নায়ক নাসুম।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মিচেল মার্শ আর বেন ম্যাকডারমট অবশ্য দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। আগের দুই ম্যাচে এই মার্শই ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ স্কোরার। কালও সেই মার্শ সাকিব, মোস্তাফিজদের গলার কাটা হয়ে ছিলেন লম্বা সময়। দলীয় ৭১ রানে ম্যাকডারমটকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান সাকিব। পরের ওভারে শরিফুল, ময়েজেস হেনরিকসকে শামিমের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন।
টানা ২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। এই চাপই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাড়িয়েছে ওয়েডের দলের জন্য। পরে আর ১ উইকেট হারালেও বলের সঙ্গে রান তোলার গতি মেলাতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা। আর তাতেই ১১৭ রানে শেষ নির্ধারিত ২০ ওভার। শেষ পর্যন্ত ১০ রানে ম্যাচ জিতে লেখা হয় বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেকোন ফরম্যাটে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ে গড়া হয়েছে ইতিহাস। এবার বাকি থাকলো আরেকটি কাজ। বাংলাওয়াশ!
সূত্রঃ আজকের পত্রিকা।