চোরাচালান ও মাদক পাঁচার বন্ধে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং পুলিশের অব্যাহত অভিযান সত্ত্বেও বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাদক পাঁচার বন্ধ করা যাচ্ছে না।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মাদক পাঁচার সিন্ডিকেটের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গাদের তৃপক্ষীয় নেটওয়ার্ক গড়ে উঠায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের চোখ এড়িয়ে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়ক হয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে।
গত ২ আগষ্ট থেকে ২০ আগষ্ট পর্যন্ত বিজিবি ও পুলিশের পৃথক ৪টি অভিযানে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে ৯ জনকে। এদের মধ্যে একজন ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতিও রয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৫০ পিস ইয়াবা। আটককৃতদের মধ্যে ১ জন রোহিঙ্গা নাগরিক, ৪ জন কক্সবাজার জেলার বাসিন্দা এবং ৩ জন নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবি ও পুলিশের দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র জানায়, অভিযানে যাদেরকে আটক করা হয়, তারা মূলত মাদকবহনকারী। পাঁচার সিন্ডিকেটের হোতারা পর্দার আড়ালে থেকে ব্যবসা পরিচালনা করায় তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। নাইক্ষ্যংছড়িতে দায়িত্বরত ১১ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফ. কর্ণেল শাহ আবদুল আজিজ আহম্মেদ বলেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। মাদক পাঁচারকারী সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের ধরতে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে তাদেরকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সবশেষ ইয়াবা চালান ধরা পড়ে ২০ আগষ্ট শুক্রবার রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মারোগ্যা পাড়া এলাকায়। এই অভিযানে পুলিশ সন্দেহজনকভাবে সোনাইছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি উ ছা লা মারমা পিন্টু (৩৫) কে চ্যালেঞ্জ করে। পরে তার দেহ তল্লাশী করে ১ লাখ ৭১ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, জব্দ করা ইয়াবার আনুমানিক বাজারমূল্য সোয়া ৫ কোটি টাকারও বেশি। আটককৃত পিন্টুর বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৬ আগষ্ট রাতে পুলিশের এক অভিযানে নাইক্ষ্যংছড়ির চাকঢালা সড়কের পাকা কালভাট পয়েন্টে সন্দেহভাজন ৫ জনকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৪৬ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা।
এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাসিন্দা সৈয়দ উল্লাহ (৫০), সৈয়দ আলম (৪০), আবুল কাশেম (৩৫) এবং কক্সবাজারের রামু উপজেলার ইব্রাহিম খলিল (৩২) ও কক্সবাজার কুতুপালং ৪ নং রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা সাবের আহমদ (৫৫)।
এদিকে গত ১১ আগষ্ট রাতে উপজেলার বেংগেবা এলাকায় বিজিবি’র একটি তহল দলের হাতে ধরা পড়ে ৪০ হাজার পিস ইয়াবাসহ ২ জন। এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ২ জনই কক্সবাজারের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে ইয়াবা পাঁচারকারী সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য শামসুদ্দীন (৩৬) এবং ইয়াবাবহনকারী মোহাম্মদ আলী (২৭)।
আগষ্ট মাসের শুরুতে ২ আগষ্ট রাতে উপজেলা সদরের বাসস্টেশন এলাকায় পুলিশের আরো একটি অভিযানে ইয়াবাসহ ধরা পড়ে বশির আহমদ (৩৭)। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার জোয়ারিনালা ইউনিয়নের নাদার পাড়ায়।
বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় ইয়াবা পাঁচার নেটওয়ার্কের সাথে ৩ জন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ২ রাজনীতিক এবং ৪ জন ব্যবসায়ী জড়িত রয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না থাকায় পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না। এদের আটক করা গেলে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা থেকে ইয়াবা পাঁচারের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয়া সম্ভব হবে বলে ধারণা করছে এলাকাবাসী।
এদিকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ায় সোনাইছড়ি ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি উ ছা লা মারমাকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার জানানো হয়, জেলার যুবলীগ ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের অনুমোদন সাপেক্ষে উ ছা লা মারমা পিন্টুর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।