আগস্ট মাসজুড়ে উজানে বৃষ্টিপাত মাত্রাতিরিক্ত কমে যাওয়ায় ভরা মওসুমে পাহাড়ি নদী শংখের পানি কমতে কমতে তলানীতে ঠেকেছে।
উৎসমুখ থেকে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হওয়া পর্যন্ত শঙ্খ নদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৯৮ কিলোমিটার।
রবিবার ২১ আগস্ট দুপুরে উৎসমুখের প্রায় ৪০ কিলোমিটার ভাটিতে থানচি উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শংখ ব্রীজের কাছে পানি কম থাকায় একটি গরুকে পায়ে হেটে নদী পার হতে দেখা গেছে।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম জানান, অন্য বছরগুলোতে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নদীর এই পয়েন্টে কমপক্ষে ৩০ ফুট গভীর পানি থাকে। নদীর গভীরতা এবং প্রবল স্রোতের কারণে সাঁতরিয়ে গবাদী পশুর পারাপারও ঝুকিঁপূর্ণ থাকে।
তিনি জানান, নদীর পানি এতটাই তলানীতে ঠেকেছে যে, এবার কিছুটা সাঁতরে এবং কিছুটা পায়ে হেঁটে গরুগুলো অনায়াসে নদী পার হতে পারছে।
নদী দিয়ে গরু পাড় হওয়ার ছবি তোলার সময় কাছে এসে দাড়ালেন বেশ কয়েকজন পাহাড়ি মানুষ।
নিজেদের মধ্যে তারা হাসাহাসি করছিলেন। এর কারণ জানতে চাইলে প্রেন লাউ ম্রো নামে ষাটোর্ধ্ব একজন যা বললেন, তার মর্মার্থ হচ্ছে- দেখ দেখ গরুটা কি সহজেই নদী পার হয়ে যাচ্ছে। ম্রো জনগোষ্ঠির এই উৎসুক দলটি থানচির কালাই পাড়ার বাসিন্দা।
ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাষা এবং ইশারায় প্রেন লাউ ম্রো বললেন, বিগত বছরগুলোতে উজানে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে এমন আগস্ট মাসেও নদী পাড়ের এলাকাগুলো বন্যা কবলিত হয়ে পড়তো। এখন নদীতে পানি নেই। তাই শীত মওসুমে নদীর দু’পাড়ে শীতকালীন সব্জী, তামাক চাষসহ অন্যান্য ফসল আবাদ ব্যাহত হতে পারে।
থানচি উপজেলার কেন্দ্রস্থল শংখ ব্রীজে দাঁড়িয়ে দেখলে এর এক পাশে উপজেলা পরিষদের আবাসিক এলাকা, আরেক পাশে থানচি বাজার এবং নদীর ঘাট। দু’দিকের যেদিকেই চোখ যায়, এখানে ওখানে নদীর বুকে চর দেখা যায়। বাজারের দিকে তাকালে দেখা যায়, ব্রীজ প্রান্ত থেকে প্রায় ৪০০/৫০০ ফুট দীর্ঘ এলাকা জুড়ে বালিচর সৃষ্টি হয়ে আছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী, থানচি শঙ্খ ব্রীজ পয়েন্টে নদীর প্রশস্ততা প্রায় ২০০ মিটার। ২৩ আগস্ট গুগল আর্থ এর তথ্য অনুযায়ী, এই পয়েন্টে পানির প্রশস্ততা পাওয়া গেছে মাত্র ৩৪ মিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, এই পয়েন্টে প্রতি সেকেন্ডে স্রোতের গতি ১ দশমিক ৭১ লিটার।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেলো, নদীতে বর্তমানে কোনো স্রোত নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, বান্দরবান জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের চাহিদা কমপক্ষে ২৫০০ মিলিমিটার। গত ১০ বছরের মধ্যে কোন কোন বছর ৩৮০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড আছে।
বান্দরবান মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও পানি বিভাজিকা কেন্দ্রের ইনচার্জ কৃষিবিদ মাহবুবুল ইসলাম জানান, এই কেন্দ্রের রেকর্ড অনুযায়ী ৩১ জুলাই পর্যন্ত জেলায় মোট বৃষ্টিপাত হয়েছে ৯৪৮ মিলিমিটার। ১ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত গত ২৩ দিনে বৃষ্টি হয়েছে আরো ১০৭ মিলিমিটার।
মাহবুবুল ইসলাম বলেন, শীত মওসুম শুরুর আগে আরও কিছু বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সব মিলিয়ে তা ১৫০০ মিলিমিটার অতিক্রম না করার আশঙ্কায় বেশি। এর ফলে ফসল উৎপাদন কমে যেতে পারে।
মাহবুবুল ইসলাম জানান, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম হওয়ায় জুমচাষ থেকেও খুব একটা ফলন পাওয়া যাবে না।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী জানান, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী উজানে বৃষ্টিপাত কম হলে নদীতে পানির স্রোতও কমে যায়। এর ফলে বিভিন্ন বাঁকে বালিচর পড়ে এবং নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়।
অরূপ চক্রবর্তী জানান, শংখ নদী ড্রেজিংয়ের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও শেষ হয়েছে।
প্রকল্পটি একনেকের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এবারের শীত মওসুম থেকেই ড্রেজিং এবং নদীর পাড় উঁচু করার কাজ শুরু করা যাবে।