প্রাকৃতিক পর্যটনে বান্দরবানের অনেক খ্যাতি থাকলেও এবার এখানকার পর্যটনে নতুন করে সংযোজিত হয়েছে জিপ লাইন ট্রলি ও ট্রি টপ অ্যাডভেঞ্চার সিস্টেম।
নিরাপত্তা পদ্ধতি অনুসরণ করে গাছের উপর দিয়ে হেটে যাওয়া কিংবা স্টিলের রজ্জুতে ঝুলে লেকের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে উড়ে যাওয়ার জন্য জিপ লাইন ট্রলি যুক্ত হওয়ায় অ্যডভেঞ্চার ট্যুরিজমের যুগেও প্রবেশ করলো বান্দরবান।
তিন দশক আগে মাটির বাঁধ দিয়ে দু’টি পাহাড়কে যুক্ত করে তৈরি করা হয়েছিল প্রায় ২৫ একরের কৃত্রিম লেক। জেলা সদরের এক প্রান্তে বলে নাম দেয়া হয়েছিল প্রান্তিক লেক। কালক্রমে এখানে গড়ে উঠে একটি ছোটখাটো পর্যটন কেন্দ্র। এখন এই কেন্দ্রে অত্যাধুনিক জিপ লাইন ট্রলি ও ট্রি টপ অ্যাডভেঞ্চার সিস্টেম সংযোজিত হওয়ায় প্রান্তিক থেকে জেলার ট্যুরিজমের কেন্দ্রে এসে গেছে প্রান্তিক লেক।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন গত বছরের জুলাই মাসে বান্দরবানে যোগ দেয়ার পর থেকে প্রান্তিক লেকে পর্যটন সম্ভাবনার স্বপ্ন বাসা বাঁধতে শুরু করে। ধাপে ধাপে এগোতে এগোতে এখন প্রান্তিক লেক প্রাকৃতিক তারুণ্য খুঁজে পায়। শাহ মোজাহিদ উদ্দিন এবং জেলা প্রশাসনে নিয়োজিত তার সহকর্মীরা তাদের শ্রম ও নিষ্ঠা দিয়ে জীবন্ত করে তুলেছেন প্রান্তিক লেক পর্যটন কেন্দ্রকে। শিশুদের জন্য নানা ধরনের রাইডের পাশাপাশি একদিন সচল হয়ে উঠলো জিপ লাইন ট্রলি। সবার চোখের সামনে দিয়ে মাত্র ১ মিনিটে লেকের এপারে স্টার্টিং পয়েন্ট থেকে ছুটে গেল অপর পারের এন্ডিং পয়েন্টে। গাছের উপর দিয়ে হেটে যাওয়ার অ্যাডভেঞ্চার সিস্টেমটিও সচল হয়ে উঠলো সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে। বৃষ্টি আর বজ্রপাতের বিকট শব্দের মধ্যেই জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন উদ্বোধন করলেন বান্দরবানের প্রান্তিক লেক অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের।
বান্দরবান জেলা সদর কেন্দ্র থেকে ১৫ কিলোমিটারের আধুনিক সড়ক পথ পার হয়ে মাত্র ১৫/২০ মিনিটেই পৌঁছা যায় প্রান্তিক লেকে।
আকাবাঁকা পথ পেরিয়ে প্রান্তিক লেকের গেইটে এসেই সুনিসান নিরবতার এই প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমনের শিহরণ শুরু হয়ে যাবে। ঢুকতে হাতের ডানে শিশু কর্ণার। নানা রাইড দিয়ে সজ্জিত। হাতের বামে সিড়ি পথ বেয়ে সামনে এগুলেই বৃক্ষরাজির ফাঁক দিয়ে বিশাল জলরাশির দিকে চোখ পড়ে যায়। সিড়ি দিয়ে নামার পথেই মাথার উপর ঝুলে আছে লাল-সবুজ-হলুদ আর মেরুন রঙের নানা উপকরণ। এটিই ট্রি টপ অ্যাডভেঞ্চার সিস্টেম। আরো একটু সামনে এগুলেই জিপ লাইন ট্রিলির স্টার্টিং পয়েন্ট। ডানে বামে প্যাডেল চালিত বোট। মাত্র ৩০০ টাকায় ঘুরে বেড়ানো যায় পুরো লেক।
জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, আমরা সবে মাত্র শুরু করলাম। প্রকৃতি নির্ভর অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের সম্ভাবনাকে আমরা বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
বান্দরবান শহর থেকে সিএন্ডজি চালিত ট্যাক্সি, চাঁদের গাড়ি বা ভাড়ায় চালিত জিপ গাড়ি নিয়ে সহজেই চলে আসা যায় এখানে। অনায়াসে ৫/৭ ঘন্টা কাটিয়ে ফিরেও আসা যায় দিনে দিনে।
লেকের প্রায় পুরোটা অংশ জুড়েই সিড়ি ও সেতু দিয়ে হেটে বেড়াতে ভালো লাগবে যে কারোর। এই কেন্দ্রের নানা অংশে পিকনিক বা ছোটখাটো অনুষ্ঠান করার ব্যবস্থা রয়েছে।
সুয়ালক এলাকায় অবস্থিত প্রান্তিক লেকের প্রবেশ মুখেই বুকিং কাউন্টার আছে। টিকেট কেটে ঢুকে গিয়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে সারাদিন। তবে ফ্যামিলি ট্যুর বা গ্রুপ প্রোগ্রাম করার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের নেজারত শাখা বা পর্যটন শাখায় আগাম যোগাযোগ করে আসতে পারলেই ভালো।
স্থানীয়রা বলেছেন, শহরের কাছাকাছি নীলাচল, মেঘলা, শৈলপ্রপাতের সাথে প্রান্তিক লেকের হাতছানি বান্দরবানের পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হবে।