বান্দরবানবৃহস্পতিবার, ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রামগড় চা-বাগানে ত্রিপুরা শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

প্রতিবেদক
বার্তা বিভাগ
জুন ২৪, ২০২৫ ৬:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পিছিয়ে পড়া ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং সামাজিক ও ঐতিহাসিক সচেতনতা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে রামগড় চা-বাগান টিলা এলাকায় অনুষ্ঠিত হলো একটি অর্থবহ আলোচনা সভা। ২০ জুন শুক্রবার বিকাল ৩টায় ত্রিপুরা ছাত্র ও যুব কমিটির আয়োজনে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১১০ জন এবং একাদশ শ্রেণির ৫ জনসহ মোট ১১৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুমেন ত্রিপুরা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি হরি সাধন ত্রিপুরা। প্রধান আলোচক ছিলেন চুপান্তি ত্রিপুরা, যিনি টিএসএফ বিডি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষাবিষয়ক একজন সক্রিয় নারী নেতৃত্ব। দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন ত্রিপুরা জাতির ইতিহাসচর্চা ও সামাজিক আন্দোলনে নিবেদিত সমাজকর্মী, লেখক ও গবেষক সুরেশ বরণ ত্রিপুরা।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক জুনিয়া ত্রিপুরা, টিএসএফ বিডির রামগড় ও ফটিকছড়ি উপজেলা শাখাসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ এবং ত্রিপুরা যুব সমাজের সক্রিয় প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বক্তারা ত্রিপুরা জাতির ঐতিহাসিক পটভূমি এবং বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন।

বক্তারা বলেন, ৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘকাল ধরে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিল। ত্রিপুরা রাজা ও মহারাজারা শাসনক্ষমতায় থেকে বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তির মোকাবিলা করলেও, নিজেদের জাতিকে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা উদাসীন ছিলেন। ধর্মীয় স্থাপনার প্রতি তাদের যতটুকু আগ্রহ ছিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ততটাই অনীহা ছিল। তারা কুমিল্লায় মুসলিম বন্ধুর স্মরণে শাহ সুজা মসজিদ নির্মাণে উদ্যোগ নিলেও ত্রিপুরাদের জন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেননি। রাঙামাটিতে চিংমরম বৌদ্ধ বিহারের জন্য অর্থ সাহায্য করলেও ত্রিপুরা জাতির জন্য শিক্ষা-ভিত্তিক কোনো অবকাঠামো গড়ে তোলার নজির নেই।

ফলে ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে ব্রিটিশ শাসন এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানি আমলে ত্রিপুরা জাতি শিক্ষাবঞ্চিত ছিল। ১৯৪৯ সালে ত্রিপুরা রাজা ভারতের সঙ্গে একীভূত হলে রাজ্যটি বিভক্ত হয় এবং ফেনী নদী হয়ে একটি অংশ পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলেও গত ৫৪ বছরে রাষ্ট্রীয় মূলধারায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত হয়নি।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ত্রিপুরা জাতির আর্থসামাজিক উন্নয়নে সামাজিকভাবে সচেতন সমাজকর্মীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন সমাজকর্মীর আসল কাজ হলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নিরলস কাজ করে যাওয়া। বর্তমান প্রজন্মকে শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে জাতিগত অস্তিত্ব, সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা বিলীন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সভায় বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এমন উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা তৈরি হবে এবং সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা বাড়বে। ত্রিপুরা জাতিকে শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত করতে এই ধরনের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করা প্রয়োজন বলেও মত দেন আয়োজকরা।

– শ্যামল রুদ্র, রামগড় (খাগড়াছড়ি)