ক্যাডেস্ট্রাল জরিপের মাধ্যমে হোল্ডিং শনাক্তকরণ না থাকার কারণেই পার্বত্য তিন জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাজড করা যাচ্ছে না।
এর ফলে ভূমি রেজিস্ট্রিকরণ এবং ভূমি সংক্রান্ত মামলাসমূহ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সূত্রতা হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রবিবার ২৮ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এমন অভিমত উঠে এসেছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসন স্থানীয় কালেক্টরেট সভাকক্ষে এই মতবিনিময় সভা আয়োজন করে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) শারমিন জাহান এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসএম মনজুরুল হক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, মৌজা হেডম্যান, গ্রাম প্রধান (কারবারী), কানুনগো, সার্ভেয়ার এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) শারমিন জাহান বলেন, সারাদেশে একাধিকবার ভূমি জরিপ হয়েছে। কিন্তু নানা আইনী জটিলতা এবং বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় এখন পর্যন্ত ভূমি জরিপ পরিচালনা করা যায়নি।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য শান্তিচুক্তির পর একটি স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আইনী জটিলতার জন্য এই কমিশনও খুব একটা কাজ করতে পারছে না।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এতসব সমস্যা স্বত্ত্বেও এখানকার ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড এর আওতায় কিভাবে আনা যায়, সে বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করা হবে।
প্রসঙ্গত: সারাদেশে তহশীল অফিসের মাধ্যমে ভূমি কর ও ভূমি ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি-১৯০০’ অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামে সার্কেল চিফ বা রাজার মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়। এই আইনের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনিট সার্কেলে বিভক্ত করে চাওকমা, বোমাং ও মং একজন করে সার্কেল চিফ নিয়োগ দেন। স্থানীয় ভাবে তারা রাজা হিসেবে পরিচিত। এছাড়া প্রতিটি মৌজায় একজন করে হেডম্যান ও প্রতিটি পাড়ায় একজন করে কারবারী নিয়োগ করা হয়। তাদের মাধ্যমেই ভূমি কর আদায়, ভূমি বিষয়ক শালিস এবং উত্তরাধিকার নির্ণয় করা হয়।
তারাছা মৌজার হেডম্যান হ্লা থোয়ায় হ্রী (Hla Thoai Hree) বলেন, গত ১২৫ বছরেও পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি কর বাড়ানো হয় নি। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতি একর প্রথম শ্রেনীর জমির জন্য বার্ষিক ৩ টাকা হারে খাজনা দিতে হয়। দ্বিতীয় শ্রেনীর জমির একর প্রতি খাজনা ২ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেনীর জন্য ১ টাকা হারে খাজনা আদায় করা হয়। এই খাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের মধ্যে হেডম্যান ৪২ শতাংশ, সার্কেল চিফ বা রাজা ৩৭ শতাংশ নেয়ার পর অবশিষ্ট ২১ শতাংশ সরকারি কোষাগারে জমা হয়। এই আয় দিয়ে মৌজা প্রশাসন পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ করা খুব কঠিন।
এ পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির কারণে বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় কোন তহসিলদার নেই। জেলা প্রশাসকগণই ভূমি রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৌজা হেডম্যান ও সার্কেল চিফ- এর সুপারিশের ভিত্তিতে ভূমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। তবে ক্রেতার নামে চূড়ান্ত নামজারীর জন্য স্ব স্ব পার্বত্য জেলা পরিষদের পুর্বানুমোদিত নিতে হয়।
বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসএম মনজুরুল হক বলেন, এসব পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে জমি ক্রয় বিক্রয়ের পর নামজারী সম্পন্ন হতে ২/৩ বছর লেগে যায়।
তিনি জানান, ভূমি সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার আপীল কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
